নওগাঁর মহাদেবপুরে আত্রাই নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজের ২২ ঘন্টা পর স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজশাহীর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একদল ডুবুরি অভিযান চালিয়ে সোমবার ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় তাদের লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
রোববার বেলা ১১টায় তারা নিখোঁজ হন। নিহতরা হলেন দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলা সদরের পুরাতন জেলখানা এলাকার পারভেজ হোসেন (২০) ও তার স্ত্রী মিনি আকতার সুমা (১৮)।
নিহত সুমার বোন মিম আকতার মামুনি জানান, শনিবার তারা তাদের মামাতো বোন মুনি আকতারের বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামে বেড়াতে আসেন। মুনি আকতারের স্বামী জুয়েল হোসেনের বাড়ি আত্রাই নদীর পশ্চিম পাশের বাঁধ সংলগ্ন এলাকায়। রোববার সকালে জুয়েল ও পারভেজ আত্রাই নদীর স্বল্প জলে নেমে হাত দিয়ে ছোট মাছ ধরেন। এরপর পারভেজ তার তিন মাসের অন্ত:স্বত্ত্বা স্ত্রী মিনি আকতার সুমাকে ডেকে নিয়ে নদীতে গোসল করতে যায়। তারা জলকেলিতে ধীরে ধীরে মাঝনদী পেরিয়ে পূর্বপারের দিকে যায়। মিনি যেতে না চাইলেও পারভেজ তার হাত ধরে নদীর অল্প পানিতে হাঁটতে হাঁটতে নিয়ে যেতে থাকে।
এক পর্যায়ে তারা নদীর গভীর খাদে পড়ে যান। সাঁতার না জানা স্বামী-স্ত্রী মূহুর্তে খাদে তলিয়ে যায়। তাদের চিৎকারে মিনির দুলাভাই জুয়েল দ্রুত সেখানে গিয়ে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালান। তারা জুয়েলকে ধরে ভেঁসে ওঠার চেষ্টা করার সময় জুয়েলের লুঙ্গি তাদের হাতে আটকে যায়। ফলে জুয়েলও তলিয়ে যেতে থাকেন। পাশেই মাছ ধরা জেলেরা দ্রুত সেখানে গিয়ে উলঙ্গ অবস্থায় জুয়েলকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। জেলেরা জাল ফেলে দুপুর পর্যন্ত স্বামী স্ত্রীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
খবর পেয়ে মহাদেবপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
মহাদেবপুর ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ঘটনার পরপরই সেখানে পৌঁছালেও উদ্ধার কাজ শুরু করতে পারেনি। বিকেল সাড়ে ৫টায় রাজশাহী থেকে একদল ডুবুরি সেখানে এসে রাত ৮টা পর্যন্ত অভিযান চালায়।
সোমবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে আবার তাদের অভিযান শুরু হয়। তারা সকাল সাড়ে ৯টায় ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার ভাটিতে নদীর পূর্বপারে বুড়া শিবতলা নামক স্থানে নদীর ঝোপের সাথে আটকানো অবস্থায় মিনির ভাসমান লাশ দেখতে পান। তার কিছু দূরেই পাওয়া যায় পারভেজের লাশ।
এদিকে লাশ উদ্ধারের পর এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মিম আকতার মামুনি জানান, তাদের এলাকায় নদী না থাকায় তারা কেউ সাঁতার জানতেন না।
উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দানকারী নওগাঁ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র ষ্টেশন মাস্টার শফিউল ইসলাম জানান, দুই দফায় রাজশাহী থেকে ৫জন ডুবুরি এসে অভিযানে অংশ নেন। তিনি জানান, ঘটনাস্থলে প্রায় ৪০ ফুট গভীর খাদ ছিল।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন এখানে বালু উত্তোলন করায় সেখানে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। এর পাশেই গতবছরও একইভাবে একজনের মৃত্যু হয়।
মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, এব্যাপারে থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে। লাশ দাফনের জন্য স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।